Read Online in Bangla
Table of Content
ভূমিকা এবং সূচীপত্র্র
সাধারণ তথ্য
কিডনি ফেলিউর
কিডনির অনান্য মুখ্য রোগ
কিডনি রোগের মধ্যে পথ্য

6 কিডনির রোগের ব্যাপারে প্রচলিত ভুল ধারণা এবং বাস্তব সত্য

ভুল ধারণা: কিডনির সব রোগই খুব ভয়ঙ্কর।

বাস্তব সত্য: না, কিডনির সব রোগই খুব ভয়ঙ্কর নয়। ঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসার দ্বারা বেশিরভাগ রোগই ঠিক হয়ে যায়।

ভুল ধারণা: কিডনি ফেলিওর হলে কেবলমাত্র একটি কিডনিই খারাপ হয়।

বাস্তব সত্য: না, দুটি কিডনিই একসাথে খারাপ হয়। সাধারণত যখন কোনও মানুষের একটি কিডনি খারাপ হয়, তখনও রোগীর কোনও অসুবিধা হয় না। রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রাতে কোনও পরিবর্তন হয় না। যখন দুটি কিডনিই খারাপ হয়ে যায় তখন শরীরের অনাবশ্যক বর্জ্য পদার্থ যা কিডনির দ্বারা শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়, শরীর থেকে বের হয় না। যার ফলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। রক্ত পরীক্ষাতে বর্ধিত ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিন এর মাত্র কিডনি ফেলিওরের নিদর্শন। একটা কিডনিতে টিউমার, পাথর, infection বা একটা Ureter-এ obstruction একটি কিডনির খারাপ হওয়ার কারণ হতে পারে। তখন সেই কিডনিতে ব্যথা হতে পারে। এইক্ষেত্রে অন্য কিডনি ঠিক থাকলে, রক্তে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন-এর মাত্রা বাড়বে না।

ভুল ধারণা: কিডনির যে কোনও রোগে, শরীরের ফোলাভাব কিডনি ফেলিওরের সংকেত দেয়।

বাস্তব সত্য: না, কিডনির অনেক রোগে কিডনির কার্যপ্রণালী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও শরীরে ফোলাভাব লক্ষ করা যায়। উদাহরস্বরূপ বলা যায় নেফ্রোটিক সিনড্রোম।

ভুল ধারণা: কিডনি ফেলিওরে সমস্ত রোগীরই শরীরে ফোলাভাব দেখা যায়।

বাস্তব সত্য: না, বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দুটি কিডনি খারাপ হবার পরেও রোগীর ডায়ালিসিস করানো সত্ত্বেও ফোলাভাব লক্ষ করা যায় না। সারাংশ হল এই যে, কিডনি ফেলিওরের অধিকাংশ রোগীদের ক্ষেত্রেই ফোলাভাব লক্ষ করা যায়, কিন্তু সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে নয়।

ভুল ধারণা: এখন আমার কিডনি ঠিক আছে সুতরাং এখন আর ওষুধ খাবার দরকার নেই।

বাস্তব সত্য: ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরে রোগের লক্ষণ সাময়িকভাবে কম হয়। এর ফলে কিছু রোগী রোগহীন হবার ভ্রম করে ফেলে এবং ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, যার ফল ভবিষ্যতে খারাপ হয়। ওষুধ আর নিয়ন্ত্রণের অভাবে কিডনি তাড়াতাড়ি খারাপ হতে শুরু করে এবং খুব তাড়াতাড়ি ডায়ালিসিস-এর সাহায্য নেবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

ভুল ধারণা: রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা একটু বেশি আছে, কিন্তু শরীর ঠিক আছে, সুতরাং চিন্তা করার বা চিকিৎসা করানোর দরকার নেই।

বাস্তব সত্য: এটা খুবই ভুল ধারণা। ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের রোগীদের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অল্পসল্প তখনই বাড়ে যখন কিডনিযুগলের কার্যক্ষমতা ৬০ শতাংশ বা তার বেশি কমে যায়। এমতাবস্থায় লক্ষণের অভাবে বেশ কিছু রোগী চিকিৎসা বা ওষুধ সেবনের উপর গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এই অবস্থাতেই ওষুধ এবং চিকিৎসার দ্বারা সর্বাধিক লাভ হয়। এইরকম সময়ই নেফ্রোলজিস্ট দ্বারা দেওয়া ওষুধ দীর্ঘদিন পর্যন্ত কিডনিকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত, যখন ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৫.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর বেশি হয়ে যায়, তখন কিডনিযুগলের কর্মক্ষমতা ২০ শতাংশ বা তারও বেশি পর্যন্ত কমে যায়। এই অবস্থায় কিডনির অনেকটা ক্ষতি হয়ে গিয়ে থাকে। তৎক্ষণাৎ সঠিক চিকিৎসাতে কিডনির উপকার হতে পারে। কিন্তু আমাদের জানা দরকার যে, চিকিৎসা থেকে প্রাপ্ত লাভের সুযোগ অনেকটাই অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। যখন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৮.০ থেকে ১০.০ মি.গ্রা./ডেসিলিটার হয়, তার অর্থ কিডনি অনেকটা বেশিই খারাপ হয়ে গেছে। এই অবস্থায়, Chronic Renal Failure চিকিৎসা বা ঔষধ পথ্যের দ্বারা ঠিক হবার সুযোগ আর থাকে না। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই এই সময়ে ডায়ালিসিসের দরকার হয়। Acute Renal Failure-এ ও ক্রিয়েটিনিন বাড়তে পারে, তখন ডায়ালিসিস এবং ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা দরকার।

ভুল ধারণা: একবার ডায়ালিসিস করালে বার বার ডায়ালিসিস করাতে হয়।

বাস্তব সত্য: না, অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের রোগীদের ক্ষেত্রে কয়েকবার ডায়ালিসিস করানোর পরে, কিডনি পুনরায় ঠিকঠাক কাজ করতে শুরু করে এবং আর ডায়ালিসিস করানোর দরকার হয় না। ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ডায়ালিসিসে দেরি করলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডায়ালিসিস দ্বারা কেবলমাত্র ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া ইত্যাদি দূষিত পদার্থ পরিষ্কার করা হয়। কিডনি ফেলিওর ওষুধ বা অন্যান্য পদ্ধতিতে ঠিক করা যেতে পারে।

কিন্তু ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের অন্তিম পর্যায়ে, শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ডায়ালিসিস অনিবার্য।

কতবার ডায়ালিসিস করানো দরকার তা কিডনি ফেলিওরের প্রকারের উপর নির্ভর করে।

ভুল ধারণা: কিডনি প্রতিস্থাপনের সময় স্ত্রী এবং পুরুষ একজন অন্যজনের কিডনি নিতে পারে না।

বাস্তব সত্য: না, প্রতিস্থাপনের সময় স্ত্রী ও পুরুষ একজন অন্যজনকে কিডনি দান করতে পারে।

ভুল ধারণা: কিডনি দান করলে শরীর এবং যৌনজীবনের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

বাস্তব সত্য: না, একটি কিডনির সঙ্গে মানুষ সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে এবং শরীর বা যৌনজীবনের উপরে কোনও প্রভাব পড়ে না।

ভুল ধারণা: কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি কেনা যেতে পারে।

বাস্তব সত্য: আইনত কিডনি কেনা বা বেচা দুটিই দণ্ডনীয় অপরাধ, যার জন্য জেল এবং জরিমানাও হতে পারে।

ভুল ধারণা: কিডনি কেবলমাত্র পুরুষদেরই থাকে এবং তা দুটি পায়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত চামড়ার থলির মধ্যে থাকে।

বাস্তব সত্য: পুরুষ এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে কিডনির অবস্থান এবং আকার সমান হয়, যা পিঠের দিকে মেরুদণ্ডের দুইপাশে অবস্থিত। পুরুষদের দুটি পায়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত থলির মধ্যস্থিত গোলাকার অঙ্গ দুটি হল শুক্রাশয় (টেসটিস), যা প্রজননের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

ভুল ধারণা: আমার রক্তচাপ এখন স্বাভাবিক, এইজন্য আমার ওষুধ খাবার দরকার নেই। আমার কোনও অসুবিধাও নেই, তো শুধু শুধু ওষুধ খাব কেন?

বাস্তব সত্য: উচ্চ রক্তচাপের কিছু রোগী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসার পরে, ব্লাডপ্রেসারের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রক্তচাপ অধিক হওয়া সত্ত্বেও কোনও অসুবিধা হয় না, তখন তাঁরা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এটা ভুল।

উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘদিন ধরে থাকলে মস্তিষ্ক এবং কিডনির উপর গভীর প্রভাব পড়ে। এই অবস্থাকে এড়ানোর জন্য কোনও অসুবিধা না থাকা সত্ত্বেও, সঠিকভাবে, সঠিকসময়ে এবং নিয়মিতরূপে চিকিৎসা করানো এবং ওষুধ খাওয়া দরকার যাতে প্রেসার সবসময় মাত্রার মধ্যে থাকে।

ভুল ধারণা: জল বেশি খেলে কিডনির রোগ সারে-

বাস্তব সত্য: প্রস্রাবে ইনফেকশান (Urinary Tract Infection), Gout এর মত, পথের ইত্যাদি কিছু সম্মুখে তিন লিটার বা তারও বেশি জল পান করা যেতে পারে। কিডনি খারাপ হলে (রক্তে ক্রিয়েটিন বাড়লে) এবং সম্মুখ যদি নেফ্রাইটিস বা নেফ্রেটিক সিনড্রোম ইত্যাদি থেকে হয়ে থাকে তখন প্রস্রাব তৈরি করার ক্ষমতা কমে যায়। এই অবস্থায় জল পরিমাণমতো খেতে হয়। যতটা প্রস্রাব হচ্ছে এবং পা ফোলা আছে কিনা দেখে জল খাওয়ার পরিমাণ ঠিক করতে হয়। এই অবস্থায় বেশি জল খাওয়া বিপদজনক।

ভুল ধারণা: কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে ওষুধ দু-একদিন না খেলেও চলে।

বাস্তব সত্য: ওষুধ একবেলাও বন্ধ করা উচিত নয়। ভুল করে একবেলা বন্ধ হলেও পরের সময় দুবেলার ওষুধ খাওয়ার দরকার। কিছুদিন বন্ধ করার পরে কিডনি নষ্ট হতে পারে।

ভুল ধারণা: খাদ্যতালিকা ঠিক রাখলে ক্রিয়েটিনিন আর বাড়বে না।

বাস্তব সত্য: খাদ্যতালিকা ঠিক রাখলে রক্তে পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং ফসফেট ইত্যাদি ঠিক রাখা যায়। কিডনি ৬০-৭০% খারাপ হওয়ার পরে সময়ের সাথে সাথে বাড়তেই থাকে। সুগার, প্রেসার, জল এবং খাদ্যতালিকা ঠিক রাখলে ক্রিয়েটিনিন বাড়ার গতি কমানো যায়, বন্ধ করা যায় না।

ভুল ধারণা: কিডনি প্রতিস্থাপন-এর পরমায়ু অনন্তকাল হবে।

বাস্তব সত্য: কিডনি প্রতিস্থাপন (সংস্থাপন) করার সময় অপারেশন গত জটিলতা, ইনফেকশান এবং রিজেকশান ইত্যাদি কারণে ২-৩% কিডনি খারাপ হতে পারে এবং ১% রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। প্রথম একবছর বিশেষ করে প্রথম তিনমাস বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। একবছর পরে কিডনির রিজেকশান কমে আসে এবং রোগী মৃত্যু অন্যান্য কারণ যেমন স্ট্রোক, হার্ট এটাক, নিউমোনিয়া, ইনফেকশান ইত্যাদি থেকেই হতে পারে। প্রতিস্থাপিত রোগীর গড় পরমায়ু সাধারণ মানুষের থেকে কম অথচ ডায়ালিসিস রোগীর থেকে অনেক বেশি।

ভুল ধারণা: ডায়ালিসিস রোগীর পরমায়ু অনেক বেশি।

বাস্তব সত্য: ডায়ালিসিস রোগীর পরমায়ু অনেক Cancer রোগীর থেকেও কম। ডায়ালিসিস রোগীরা সাধারণত স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, নিউমোনিয়া, উচ্চ পটাসিয়াম, কম ডায়ালিসিস(Under Dialysis), অন্য ইনফেকশন ইত্যাদি কারণে মারা যান। পর্যাপ্ত (৩-৪/week) ডায়ালিসিস এবং জল (Ultrapure Water) দিয়ে ডায়ালিসিস করলে পরমায়ু কিছুটা বাড়ে।